এখানে আমরা অষ্টম শ্রেণির পরিবেশের বিজ্ঞান বইয়ের অধ্যায় ২.৩ – “রাসায়নিক বিক্রিয়া” অংশটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি লাইন ধরে পর্যায়ক্রমে তৈরি করা হয়েছে ৮০ টিরও বেশি প্রশ্ন ও তাদের সহজবোধ্য উত্তর।এখানে শিক্ষার্থীরা পাবে—
- গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা।
- বইয়ের মূল ধারণা অনুযায়ী গঠনমূলক প্রশ্ন।
- পরীক্ষার উপযোগী সংক্ষিপ্ত ও বস্তুনিষ্ঠ প্রশ্নোত্তর।
অষ্টম শ্রেণী রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রশ্ন উত্তর (অধ্যায় 2.3)
1. বিক্রিয়ক কাকে বলে?
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পদার্থকে বিক্রিয়ক বলা হয়।
2. রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপরে কোন কোন বিষয় প্রভাব ফেলে?
রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর তাপ, আলো, চাপ, দ্রাবক ও অনুঘটক এর উপস্থিতি প্রভাব ফেলে।
3. রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর তাপের একটি প্রভাব লেখ।
উপযুক্ত উষ্ণতা না থাকায় অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শুরু হতে পারে না।
যেমন: কিউপ্রিক নাইট্রাইট ঘরের উষ্ণতায় রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না। কিন্তু গরম করা হলে কালো রংয়ের নীল গুঁড়োয় পরিণত হয়।
Cu(NO3)2 → CuO + NO2 + O2
4. রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর আলোর প্রভাব এর একটি উদাহরণ দাও।
সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে সবুজ উদ্ভিদ আলোক শক্তিকে খাদ্যের রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করে। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া আলোর অনুপস্থিতিতে শুরু হতে পারেন।
6CO2 + 6H2O → C6H12O6 + 6O2
5. ফটো তোলার ফিল্মের উপর আলো পড়লে কি হয়?
ফটো তোলার ফিল্মের উপর আলো পড়লে নানান বিক্রিয়া ঘটে, ফলে ফিল্ম কালো হয়ে যায়।
6. রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর চাপের প্রভাবের একটি উদাহরণ দাও।
খেলনা বন্দুকের কাপ কে জোরে আঘাত করলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং শব্দ, তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়।
7. একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার উদাহরণ দাও যেখানে দ্রাবকের উপস্থিতি প্রয়োজন।
খাবার সোডা ও টারটারিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল মেশালে কোন বিক্রিয়া ঘটে না। কিন্তু ওই মিশ্রণে জল দেওয়া হলে দ্রুত বিক্রিয়া ঘটে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বুদবুদ আকারে বেরতে থাকে।
8. খাবার সোডা ও টারটারিক অ্যাসিডের পরীক্ষায় দ্রাবক রূপে কেরোসিন বা বেঞ্জিন ব্যবহার করলে বিক্রিয়া ঘটে না কেন?
খাবার সোডা আয়নীয় যৌগ। তাই কেরোসিন, বেঞ্জিন বা তারপিন তেলের মতো দ্রাবক আয়ন দিয়ে তৈরি জিনিসকে দ্রবীভূত করতে পারে না। তাই বিক্রিয়া ঘটে না।
9. সোডিয়াম ক্লোরাইড নিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে কোন দ্রাবক ব্যবহার করবে? কেন?
জল ব্যবহার করব। জলে সোডিয়াম ক্লোরাইড ভালো দ্রবীভূত হয় তাই সহজে বিক্রিয়া ঘটবে।
10. জলে সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে তার মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ ঘটালে । কি ঘটবে তা লেখ।
জলে সালফিউরিক অ্যাসিড মিশিয়ে তার মধ্যে ব্যাটারির সাহায্যে তড়িৎ পাঠালে দেখা যাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে।
H2O → H2 + O2
11. ইলেকট্রোপ্লেটিং কি?
তড়িৎকে কাজে লাগিয়ে রাসায়নিক পদ্ধতিতে কোন ধাতব বস্তুর উপর অন্য ধাতুর প্রলেপ দেওয়াকেই ইলেকট্রপ্লেটিং বা তড়িৎলেপন বলে।
12. লোহার ওপর নিকেলের আস্তরণ দেওয়া হয় কেন?
লোহার উপর নিকেলের আস্তরণ দেওয়ার ফলে জিনিসগুলোই সহজে মরচে পড়ে না।
13. অনুঘটক কাকে বলে?
যেসব পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উপস্থিত থেকে বিক্রিয়ার বেগ বাড়ায় কিংবা কমায় কিন্তু বিক্রিয়া শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে, তাদের অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট বলে।
যেমন : অক্সিজেন উৎপন্ন করার বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড অনুঘটক রূপে কাজ করে।
14. অনুঘটক কিভাবে বিক্রিয়ার বেগ বৃদ্ধি করে তা একটি উদাহরণ দিয়ে দেখাও।
একটা টেস্টটিউবে অল্প হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দ্রবণের সমপরিমাণ জল মিশিয়ে রেখে দেওয়া হল। দেখা যাবে বিক্রিয়া হচ্ছে কিন্তু খুবই ধীরগতিতে। এর ফলে ধীরগতিতে বুদবুদ আকারে অক্সিজেন নির্গত হচ্ছে।
কিন্তু অন্য একটি টেস্ট টিউবে অল্প হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও সমপরিমাণ জলের সঙ্গে সামান্য ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড (MnO2) মিশিয়ে রেখে দিলে দেখা যাবে দ্রুত অক্সিজেনের বুদবুদ বেরোচ্ছে।
এখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে যে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এই বিক্রিয়ায় বেগবৃদ্ধি করেছে। অর্থাৎ এটি একটি ধনাত্মক অনুঘটক রূপে কাজ করছে।
15. অনুঘটকের বৈশিষ্ট্য লেখ।
অনুঘটক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে কিন্তু বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে।
এমন কোন অনুঘটক নেই যা সব বিক্রিয়ার বেগ বাড়াতে পারে।
কোন বিক্রিয়ায় কোন অনুঘটক উপযোগী হবে তা পরীক্ষা করে বার করতে হবে। সমীকরণ দেখে বলা যায় না।
16. রাসায়নিক কারখানায় অনুঘটক বুড়ো কিংবা শুরু তারজালি আকারে ব্যবহার করা হয় কেন?
গুঁড়ো করলে অনুঘটকের ক্ষেত্রফল বাড়ে এবং অনুঘটকের কাজও ঘটে তাড়াতাড়ি। তাই রাসায়নিক কারখানায় কঠিন অনুঘটক ব্যবহার করলে তা সূক্ষ্ম গুড়ো বা সরু তারজালি আকারে রাখা হয়।
17. বাড়িতে ধুনো দেওয়ার সময় বড় টুকরোর চেয়ে সমান ওজনের গুঁড়ো ধুনো তাড়াতাড়ি জ্বলে ওঠে কেন?
বাড়িতে ধুনো দেওয়ার সময় গুঁড়ো করলে ধুনোর ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বেশি অনুর সঙ্গে অক্সিজেন বিক্রিয়া করার সুযোগ পায়।। তাই তাড়াতাড়ি ধুনো জ্বলে ওঠে।
18. বড় টুকরোর চেয়ে গুঁড়ো মসলা অপেক্ষাকৃত কম সময়ে রান্নায় সুগন্ধ আনে কেন?
মসলা গুঁড়ো করে দিলে তার ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পায়। ফলে সহজেই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে পারে। তাই বড় টুকরোর চেয়ে গুঁড়ো মসলা অপেক্ষাকৃত কম সময়ে রান্নায় সুগন্ধ আনে।
19. আস্ত আলুর চেয়ে ছোট টুকরো সেদ্ধ হতে কম সময় লাগে কেন?
আস্ত আলুর চেয়ে ছোট টুকরোর ক্ষেত্রফল বেশি। তাই বেশি পরিমাণ ক্ষেত্রফল গরম জলের সংস্পর্শে আসে। তাই তাড়াতাড়ি টুকরোগুলো সিদ্ধ হয়ে যায়।
20. বড় দানার চিনির চেয়ে গুঁড়ো চিনি জলে তাড়াতাড়ি গোলে কেন?
বড় দানার চিনির তুলনায় গুড়ো চিনির ক্ষেত্রফল বেশি। তাই চিনির বেশি ক্ষেত্রফল জলের সংস্পর্শে আসে এবং দ্রুত দ্রবীভূত হয়।
21. জৈব অনুঘটক গুলো প্রধানত ____ যৌগ।
প্রোটিনজাতীয়।
22. আলুতে কোন এনজাইম বা উৎসেচক থাকে?
ক্যাটালেজ।
23. মেটে বা লিভারে কোন উৎসেচক বা এনজাইম থাকে?
ক্যাটালেজ।
24. তরমুজের বীজে কোন উৎসেচক বা এনজাইম থাকে?
ইউরিয়েজ।
25. অড়হর ডালে কোন এনজাইম বা উৎসেচক থাকে?
ইউরিয়েজ।
26. ক্ষারীয় দ্রবণে ফেনলথ্যালিন দিলে কোন রং হয়?
গোলাপী।
27. প্রস্রাবাগারের ঝাঁঝালো গন্ধ এর জন্য দায়ী কোন গ্যাস?
অ্যামোনিয়া।
28. তাপোচি রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে?
যে রাসায়নিক পরিবর্তনের তাপ উৎপন্ন হয় তাকে তাপমোচী রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।
যেমন: কয়লা পোড়ানো, পোড়া চুনে জল দেওয়া ইত্যাদি।
29. কার্বনের দহন কোন জাতীয় রাসায়নিক পরিবর্তন?
তাপমোচী রাসায়নিক পরিবর্তন।
30. পোড়া চুনের জল দিলে কোন জাতীয় রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে?
তাপমোচী রাসায়নিক পরিবর্তন।
31. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিভাবে তাপকে কাজে লাগানো হয়?
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা বা গ্যাস পুড়িয়ে যে তাপ শক্তি পাওয়া যায় তা দিয়ে জল ফুটিয়ে বাসবো তৈরি করা হয়। বেশি চাপের এই গরম বাষ্প যখন ধাক্কা দিয়ে টারবাইনের পাখা ঘোরায় তখন বিদ্যুৎ তৈরি হয়।
32. ঝালাইয়ের কাজে কোন গ্যাস ব্যবহার করা হয়?
অ্যাসিটিলিন গ্যাস।
33. ধাতু ঝালাই দিতে কি ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্য নেওয়া হয়?
তাপমুচির রাসায়নিক বিক্রিয়ার সাহায্য নেওয়া হয়।
34. তাপগ্রাহী রাসায়নিক পরিবর্তন কাকে বলে?
যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে পরিবেশ থেকে তাপ শোষিত হয় তাকে তাপগ্রাহী রাসায়নিক পরিবর্তন বলে।
35. একটি তাপগ্রাহী রাসায়নিক পরিবর্তনের উদাহরণ দাও।
কঠিন বেরিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর জলযুক্ত ক্রিস্টাল ও কঠিন অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড কে একটা বিকারে রেখে মেশালে দ্রুত বিক্রিয়া ঘটে এবং বিকারটি খুবই ঠান্ডা হয়ে যায়। এটি একটি তাপগ্রাহী রাসায়নিক পরিবর্তন।
36. চুনাপাথর থেকে পোড়া চুন তৈরি কি ধরনের পরিবর্তন?
তাপগ্রাহী পরিবর্তন।
37. ভৌত পরিবর্তন কি তাপগ্রাহী কিংবা তাপমোচী হতে পারে?
হ্যা। ভৌত পরিবর্তনও তাপগ্রাহী কিংবা তাপমোচি হতে পারে।
38. একটি তাপগ্রাহী ভৌত পরিবর্তন এর উদাহরণ দাও।
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড কে জলে দ্রবীভূত করার দু মিনিটের মধ্যেই দেখা যাবে পাত্রটি ঠান্ডা হয়ে গেছে এবং তার গায়ে ফোঁটা ফোঁটা জল জমেছে।
39. অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড কে জলে দ্রবীভূত করলে পাত্রের গায়ে জলবিন্দু জমে কেন?
এটি একটি তাপগ্রাহী ভৌত পরিবর্তন। অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডকে জলে দ্রবীভূত করলে পরিবেশ ও পাত্র থেকে তাপ শোষিত হয়। এর ফলে পাত্রটি ঠান্ডা হয়ে যায় এবং বায়ুর জলীয়বাষ্প জল বিন্দুতে পরিণত হয়।
40. কোন পরিবর্তন যে রাসায়নিক পরিবর্তন তা কি করে বোঝা যায়?
যদি পরিবর্তনটি সময় নিম্নলিখিত ঘটনাগুলি ঘটে তাহলে প্রাথমিকভাবে বোঝা যেতে পারে যে পরিবর্তনটি রাসায়নিক পরিবর্তন। যেমন:
- কোন অদক্ষেপ পড়ে।
- গ্যাস নির্গত হয়।
- রঙের পরিবর্তন হয়।
- তাপমুক্ত বা শোষিত হয়।
41. পোড়াচুনে জল দিলে প্রচুর জলীয় বাষ্প নির্গত হয় কেন?
পোড়াচুন ও জলের বিক্রিয়া একটি তাপমোচি বিক্রিয়া। এর ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপে জল বাষ্প হতে শুরু করে।
42. ঝালাই এর কাজে কোন কোন গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়?
অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।
43. ওয়েল্ডিং এর সময় বিশেষ ধরনের ফিল্টার লাগানো চশমা ব্যবহার করা উচিত কেন?
ওয়েল্ডিং এর সময় অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের মিশ্রণের দহনে প্রায় দুই হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন হয়। ২ উষ্ণতায় যে আলো উৎপন্ন হয় তাতে খানিকটা অতিবেগুনি রশ্মিও থাকে। অতিবেগুনি রশ্মি চোখের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই বিশেষ ধরনের ফিল্টার লাগানো চশমা পরে এই কাজ করতে হয়।
44. দহন কাকে বলে?
জ্বালানিকে খোলা বাতাসে পোড়ালে তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়।এই ঘটনাকে বিজ্ঞানের ভাষায় দহন বলা হয়।
45. বাতাসে সালফার পোড়ালে কোন গ্যাস উৎপন্ন হয়?
সালফার ডাই অক্সাইড।
46. সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাসের গন্ধ কেমন?
তীব্র ঝাঁঝালো।
47. ম্যাগনেসিয়াম ধাতুর ফিতে আগুনে পোড়ালে কি উৎপন্ন হয়?
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড এর সাদা গুঁড়ো উৎপন্ন হয়।
Mg + O2 → MgO
48. জারণ কাকে বলে?
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন মৌল বা যৌগের সাথে অক্সিজেন কিংবা ক্লোরিন যুক্ত হয় কিংবা কোন যৌগ থেকে হাইড্রোজেন বেরিয়ে যায় তাকেই জারন বলে।
49. বিজারণ কাকে বলে?
যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন মৌল বা যৌগের সাথে হাইড্রোজেন যুক্ত হয় কিংবা কোন যৌগ থেকে অক্সিজেন বেরিয়ে যায় তাকে বিজারণ বলে।
50. কোন মৌলের সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হওয়ার বিক্রিয়াকে _____ বলে।
জারন।
51. লোহার মরচে পরা একটি ____ বিক্রিয়া।
রাসায়নিক।
52. লোহার মরিচার সংকেত লেখ।
2Fe2O3, nH2O
53. জলে ডুবিয়ে রাখলেও লোহায় মরিচা পড়ে কেন?
জলের মধ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে তার সাথে লোহার বিক্রিয়ায় মরিচা পড়ে।
54. ফুটন্ত জলের মধ্যে লোহার পেরেক ডুবিয়ে জলের উপর মোমের স্তর দিলে কি মরিচা পড়বে?
এক্ষেত্রে মরিচা পড়বে না। কারণ ফুটন্ত জলের মধ্যে অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকবে না। তাছাড়া মোমের জন্য অক্সিজেন ওই জলের মধ্যে যেতে পারবে না।
55. অক্সিজেনের পরিবর্তে ____ যুক্ত হওয়াকেও জারণ বলে।
ক্লোরিন।
56. কোন পদার্থ থেকে ____ অপসারণ কে জারণ বলে।
জারন।
57. ক্লোরিন জলের মধ্যে দিয়ে হাইড্রোজেন সালফাইট চালু না করলে কি ঘটে? এক্ষেত্রে জারণ রেখাচিত্রের মাধ্যমে দেখাও।
ক্লোরিন জলের মধ্যে দিয়ে হাইড্রোজেন সালফেট গ্যাস চালনা করলে দ্রবণটি ঘোলা হয়ে যায়। বিক্রিয়ায় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ও সালফার উৎপন্ন হয়। নিচের সালফার থিতিয়ে পড়ে।
H2S + Cl2 → HCl + S↓
58. কালো রঙের উত্তপ্ত কেউপ্রিক অক্সাইড এর উপর দিয়ে হাইড্রোজেন চালনা করা হলে কি ঘটবে?
কালো রঙের উত্তপ্ত কিউপ্রিক অক্সাইড এর উপর দিয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস পাঠালে অবশেষ হিসাবে লালচে বাদামী রঙের ধাতব কপার পাওয়া যায়।
CuO + H2 → Cu + H2O
59. কোন মৌল বা যৌগের সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত হওয়াকে কি বলে?
বিজারণ বিক্রিয়া বলে।
60. নিচের ছকটি পূরণ কর।
বিক্রিয়ার সমীকরণ | কোন পদার্থের জারণ হয়েছে | কোন পদার্থের বিজারণ হয়েছে | কোন যুক্তিতে তুমি জারণ বা বিজারণ বলবে |
---|---|---|---|
i) 2SO2 + O2 → 2SO3 | SO2 | O2 | SO2 এর সাথে অক্সিজেন যুক্ত হয়েছে। |
ii) Fe2O3 + 3CO → 2Fe + 3CO2 | CO | Fe2O3 | Fe2O3 থেকে অক্সিজেন অপসারিত হয়েছে। |
iii) ZnO + C → Zn + CO | C | ZnO | ZnO থেকে অক্সিজেন অপসারিত হয়েছে। |
iv) 2FeCl3 + H2S → 2FeCl2 + 2HCl + S | H2S | FeCl3 | H2S থেকে হাইড্রোজেন অপসারিত হয়েছে। |
v) FeO + H2 → Fe + H2O | H2 | FeO | H2 এর সাথে অক্সিজেন যুক্ত হয়েছে। |
vi) Fe2O3 + Al → Fe + Al2O3 | Al | Fe2O3 | Fe2O3 থেকে অক্সিজেন অপসারিত হয়েছে। |
61. জারক পদার্থ কাকে বলে?
যে পদার্থ অন্য পদার্থকে জারিত করে কিন্তু নিজে বিজারিত হয় তাকে জারক পদার্থ বলে।
62. বিজারক পদার্থ কাকে বলে?
যে পদার্থ অন্য পদার্থকে বিজারিত করে কি যে জারিত হয় তাকে বিজারক পদার্থ বলে।
63. জারণ বিজারণ _____ ঘটে।
একসঙ্গে।
64. তুতের জলীয় দ্রবণে চকচকে লোহার পেরেক ডুবিয়ে দিলে লোহার উপর কিসের প্রলেপ পড়ে?
তামার প্রলেপ পড়ে।
65. যে বিক্রিয়ায় ইলেকট্রনের ত্যাগ ঘটে তাকে কি বলে?
জারন বলে।
66. যে বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন গ্রহণ ঘটে তাকে কি বলে?
বিজারণ বলে।
67. জারন বিজারণ একই সাথে ঘটে ব্যাখ্যা কর।
কোন একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একটি পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করলে অন্য পরমাণু গ্রহণ করে। তাই বলা যায় জারণ বিজারণ একই সাথে ঘটে।
বিক্রিয়ার সমীকরণ | কী ঘটছে জারণ না বিজারণ |
---|---|
(i) Fe3+ + e- → Fe2+ | বিজারণ |
(ii) Cl- → Cl + e- | জারণ |
(iii) MnO42- → MnO4- + e- | জারণ |
(iv) Cu2+ + 2e- → Cu | বিজারণ |
67. সালফিউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে জিংকের বিক্রিয়ায় কি ঘটে?
সালফিউরিক অ্যাসিডের সঙ্গে জিংক এর বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন গ্যাস ও জিঙ্ক সালফেট উৎপন্ন হয়।
68. ফেরিক আয়ন থেকে ফেরাস আয়নে পরিণত হওয়া জারন না বিজারণ?
বিজারণ। কারণ এক্ষেত্রে ফেরিক আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ করছে ইলেকট্রনের গ্রহণ ঘটছে।
2Fe3+ + 2e- → 2Fe2+
69. স্টানাস আয়ন থেকে স্ট্যানিক আয়নের পরিণত হওয়া জারণ না বিজারণ?
জারন। কারণ: স্টানাস আয়ন ইলেকট্রন ত্যাগ করে স্ট্যানিক আয়নের পরিণত হচ্ছে।
70. জারক পদার্থ নিজে ____ হয়।
বিজারিত।
71. বিজারক পদার্থ নিজে ___ হয়।
জারিত।
72. জারন এর তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
- অক্সিজেন অথবা ক্লোরিন যুক্ত হয়।
- হাইড্রোজেন বেরিয়ে যাই।
- কোন মৌলের পরমাণু বা আয়ন বা কোন মূলক থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে যায়।
73. বিজারণের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
- অক্সিজেন অথবা ক্লোরিন বেরিয়ে যায়।
- হাইড্রোজেন যুক্ত হয়।
- কোন মৌলের পরমাণু বা আয়ন বা কোন মূলকে ইলেকট্রন যুক্ত হয়।
74. জারক পদার্থের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
কোন পদার্থে অক্সিজেন অথবা ক্লোরিন যুক্ত করে।
কোন পদার্থ থেকে হাইড্রোজেন অপসারণ করে।
কোন পরমাণু আয়ন বা মূলক থেকে ইলেকট্রন অপসারণ করে।
75. বিজারক পদার্থের তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ।
কোন পদার্থ থেকে অক্সিজেন অথবা ক্লোরিন অপসারণ করে।
কোন পদার্থে হাইড্রোজেন যুক্ত করে।
কোন পরমাণু বা আয়ন বা মূলকে ইলেকট্রন যুক্ত করে।
76. ধাতুর আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ___ প্রক্রিয়া।
বিজারণ।
77. ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড ও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় কিভাবে জারণ বিজারণ একই সাথে ঘটে দেখাও।
কালো রংয়ের কঠিন ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড এর সঙ্গে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের লঘু দ্রবণের বিক্রিয়া করালে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড জারিত হয়ে ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ক্লোরিন গ্যাস বেরিয়ে আসে। আর ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড বিজারিত হয়ে ম্যাঙ্গানাস ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়।
MnO2 + HCl → MnCl + Cl2 + H2O
78. ক্লোরিন ও হাইড্রোব্রোমিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় কিভাবে জারণ বিজারণ একই সাথে ঘটে দেখাও।
বর্ণহীন তরল হাইড্রোজেন ব্রোমাইড এর মধ্যে দিয়ে ঝাঁঝালো ক্লোরিন গ্যাস পাঠালে হাইড্রোজেন ব্রোমাইড জারিত হয়ে লাল রংয়ের তরল ব্রোমিনে পরিণত হয়। আর ক্লোরিন বিজারিত হয়ে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন করে।
Cl2 + HBr → HCl + Br2
79. সত্য না মিথ্যা লেখ: লোহায় মরিচা পড়া কেবল জারণ।
মিথ্যা। এক্ষেত্রে জারণ ও বিজারণ উভয়ে একসাথে ঘটে।
80. মরচে ধরা আটকাতে কি কি করা হয়?
- লোহার উপরে তেল রং বা আলকাতরার প্রলেপ দিলে লোহা জল ও বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারেনা । ফলে মরচে ধরে না।
- লোহার উপরে জিংক এর আস্তরণ দিলে জিংক লোহার মরচে ধরায় বাধা দেয়।
81. গ্যালভানাইজেশন কাকে বলে?
লোহার ওপরে জিঙ্কের প্রলেপ দেওয়াকে গ্যালভানাইজেশন বলে।
82. অনেকদিন পরে থাকা নারকেল তেলের বোতলে চিটচিটে গন্ধ বেরোয় কেন?
অনেকদিন পরে থাকায় বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে তেলের বিক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের যৌগ উৎপন্ন হয়। এই যৌগের জন্যই ওই গন্ধ সৃষ্টি হয়।
83. আপেল বা ডাব কেটে কিছুক্ষণ রাখলে বাদামি ছোপ পরে কেন?
আপেল বা ডাব কেটে রেখে দিলে বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। ফলের মধ্যে থাকা কিছু জৈব যৌগের জারণ ঘটে। তাই বাদামি ছোপ পরে।
তথ্যসূত্র: পরিবেশ ও বিজ্ঞান সপ্তম শ্রেণী (মধ্যশিক্ষা পর্ষদ)
আশা করছি তোমাদের এই উত্তর গুলো ভালো লাগবে। এখানে বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই অধ্যায়ের সমস্ত প্রশ্ন প্রায় কভার করা হয়েছে। এইগুলো যদি তুমি মনোযোগ দিয়ে পড়ো তাহলে অধ্যায়টিও তোমার কমপ্লিট হয়ে যাবে।