পতনশীল বস্তুর সূত্রাবলী ( laws of falling bodies ) : কোন বস্তুকে ভূপৃষ্ঠ কিছুটা উপর থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে সেটি উলম্ব পথে নিচের দিকে পড়ে। প্রতিদিন আমাদের জীবনে আমরা এমন ধরনের বহু পতনশীল বস্তুকে দেখে থাকি। সাধারণত কোনো বস্তু স্থির অবস্থান থেকে অথবা কিছুটা প্রাথমিক বেগ নিয়ে যাত্রা শুরু করতে পারে। বস্তুটি পড়ার সময় তার গতির বিপরীত দিকে বায়ুর বাধা অনুভব করে।
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও দুটি শর্ত সাপেক্ষে পতনশীল বস্তুর সূত্রগুলি প্রতিষ্ঠা করেন।
- (i) প্রতিটি বস্তু স্থির অবস্থান থেকে যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ প্রতিটি বস্তুর প্রাথমিক বেগ শূন্য হয়।
- (ii) প্রতিটি বস্তুর নিম্নমুখী গতিতে বায়ুর বাধা উপেক্ষণীয় বা গতির বিরুদ্ধে অন্য কোন ধরনের বাধা অনুপস্থিত।
যে বস্তু এই শর্ত দুটি পূরণ করে তাকে স্থির অবস্থান থেকে অবাধে পতনশীল বস্তু বলা হয়।
পড়ন্ত বস্তুর সূত্রাবলী | পতনশীল বস্তুর সূত্রাবলী ও তার ব্যাখ্যা
পতনশীল বস্তুর সূত্রগুলি:
পতনশীল বস্তুর প্রথম সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে অবাধ পতনের ক্ষেত্রে সব বস্তুই সমান দ্রুততায় নিচে নামে।
ব্যাখ্যা: কোন উঁচু জায়গা থেকে ঢিল ও একটি কাগজের টুকরো একসঙ্গে ছেড়ে দিলে ঢিলটি মাটিতে অনেক আগে পৌছায়। এই ধরনের প্রাথমিক ঘটনাবলীর জন্যই আগে লোকেরই ধারনা ছিল হালকা বস্তুর চেয়ে ভারী বস্তু দ্রুততায় নিচে নামে। গ্যালিলিওর প্রথম পিসার হেলানো মিনার এর উপর থেকে বিভিন্ন ওজনের বস্তুকে নিচে ফেলে দেখান যে মাটিতে পৌঁছাতে তাদের একই সময় লাগে। তিনি বলেন, বায়ুর বাধা না থাকলে বস্তুগুলি মাটিতে পৌঁছাতে একই সময় লাগতো, সময়ের কোনো হেরফের হতো না। পরে বিজ্ঞানী নিউটন তার বিখ্যাত গিনি ও পালক এর পরীক্ষার সাহায্যে গ্যালিলিওর এই সূত্রটি প্রমাণ করেন।
পতনশীল বস্তুর দ্বিতীয় সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে অবাধ পতনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন বস্তুর যে বেগ লাভ করে তা তার পতন কালের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ t সময় অর্জিত বেগ v হলে , $v\propto t$
পতনশীল বস্তুর তৃতীয় সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে অবাধ পতনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন বস্তু যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা তাঁর পতনকালের বর্গের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ t সময়ে অতিক্রান্ত দূরত্ব h হলে , $h\propto {{t}^{2}}$
শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাওয়া গ্যালিলিওর এই সুত্র গুলিকে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের সহায়তায় সহজেই তাত্ত্বিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়।
অবাধে পতনশীল বস্তুর ওজন নেই - ব্যাখ্যা করো।
কোন বস্তুর ওজন আমরা তখনই অনুভব করি যখন কোনো ভাবে বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল পৃথিবীর আকর্ষণ বলকে আমরা বাধা দিই। যক্ষায় কোন বোঝা চাপালে আমরা ওজন অনুভব করি কারণ পৃথিবী বোঝার উপর যে আকর্ষণ বল প্রয়োগ করে আমরা কিসের সাহায্যে সেই আকর্ষণ বলকে বাধা দিই। কিন্তু মাথায় বোঝা নিয়ে কোন ব্যক্তি কোন উঁচু স্থান থেকে নিচে লাফ দিলে যতক্ষণ সে শূন্যে থাকে যতক্ষণ পৃথিবীর আকর্ষণ বল কে বাধা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সে মাথায় বোঝার ভার অনুভব করে না। সুতরাং আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে অবাধে পতনশীল অবস্থায় বস্তুর ওজন শূন্য হয়।
ধরা যাক, f ত্বরণে পতনশীল কোনো m ভোরের বস্তু একটি কাল্পনিক তলের উপর অবস্থিত। অর্থাৎ কাল্পনিক তলসহ বস্তুর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে f ত্বরণে নিচে নামছে। তলটি দ্বারা বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল প্রতিক্রিয়া বল R হলে ,
$mg-R=mf$
বা, $R=m\left( g-f \right)$
বস্তুটি অবাধে পতনশীল হলে $f=g$ হবে এবং সেক্ষেত্রে $R=m\left( g-g \right)=0$
সুতরাং দলটি দ্বারা বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল প্রতিক্রিয়া বল 0 অর্থাৎ বস্তুটি সেক্ষেত্রে ওজন শূন্য হয়।
পড়ন্ত বস্তুর সূত্র
পতনশীল বস্তুর সূত্র কে আবিষ্কার করেন?
ইতালির বিজ্ঞানি গ্যালিলিও পতনশীল বস্তুর সূত্র আবিস্কার করেন।
একটি পড়ন্ত বস্তু পঞ্চম সেকেন্ডে কত দূরত্ব অতিক্রম করবে?
পতনশীল বস্তুর ক্ষেত্রে , $S=\frac{1}{2}gt{}^\text{2}$
এখানে t=5 sec , $g=9.8m/sec{}^\text{2}$
অর্থাৎ, $S=\frac{1}{2}\times 9.8\times 5{}^\text{2}$মিটার
বা, $S=\frac{1}{2}\times 9.8\times 25$
বা, $S=122.5$মিটার ।
একটি পড়ন্ত বস্তুর ত্বরণ সুষম কেন?
যেহেতু পড়ন্ত বস্তুর উপর সর্বদা মহাকর্ষীয় বল ক্রিয়া করে। তাই পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হার একই হয় । অর্থাৎ পড়ন্ত বস্তুর ত্বরণ একই হয় বা সুষম ত্বরণ হয়।
একটি পড়ন্ত বস্তুর গতিশক্তি বাড়ে কেন?
পড়ন্ত বস্তুর উপর সর্বদাই মধ্যাকর্ষণ বল ক্রিয়া করতে থাকে ফলে পড়ন্ত বস্তুর সুষম ত্বরণ নিয়ে পড়তে থাকে। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গতিশক্তি , $E_k=\frac{1}{2}mv{}^\text{2}$
আমরা জানি বস্তুর গতিশক্তি বস্তুর বেগের বর্গের সমানুপাতিক। প্রতিমুহূর্তে বৃদ্ধি তাই বলেই গতিশক্তি বাড়তে থাকে।