ছিটমহল কাকে বলে | ছিটমহল কথার অর্থ কি
ছিটমহল বা Enclave ভৌগোলিক সীমানা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু ভূখণ্ড যা অন্য দেশের মধ্যে একটি দেশের বিচ্ছিন্ন অঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
কোনো দেশের ছিটমহল গুলি সাধারণত সীমান্তের উল্টো দিকে থাকে।এগুলি আসলে বিচ্ছিন্ন কিছু জনপদ মাত্র।
একটি ছিটমহল হল একটি অঞ্চল (বা একটি অংশ) যা সম্পূর্ণরূপে অন্য একটি রাজ্যের অঞ্চল দ্বারা বেষ্টিত। আঞ্চলিক জলভাগ দ্বারা বেষ্টিত অবস্থাথাতেও ছিটমহলও থাকতে পারে।ছিটমহল কখনও কখনও অন্য কোন রাজ্য তারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিবেষ্টিত। । ভ্যাটিকান সিটি এবং সান মেরিনো উভয়ই ইতালি দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। লেসোথো হলো দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা পরিবেষ্টিত সম্পূর্ণরূপে সার্বভৌম ছিটমহল রাষ্ট্র।
কোচবিহারের রাজা কোচের জমিদারির বেশ কিছু অংশ তার রাজ্যের বাইরে পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবিগঞ্জ ,পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট , ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারীতে ছিল। এগুলি আসলে একেকটি থানা অঞ্চল। ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারত ভাগের সময় এই আটটি থানা অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে চলে যায়। আর কুচবিহার চলে আসে ভারতের মধ্যে। ফলে কিছু ভূখণ্ড চলে যায় বাংলাদেশের কাছে পক্ষান্তরে বাংলাদেশের কিছু ভূখণ্ড চলে আসে আমাদের ভারতের মধ্যে। এই ধরনের ভূমি বা জমিজমাকে ছিট মহল বলে।
ভারত এবং বাংলাদেশের এই ধরনের মোট 162 ভূখণ্ড ছিল। এরমধ্যে 111 টি ছিটমহল ভারতের যা বাংলাদেশের দিকে অবস্থিত ছিল। 111 টি ছিটমহল এর মোট আয়তন প্রায় 17 একরের সামান্য বেশি।
অন্যদিকে বাকি 51 টি বাংলাদেশি ছিটমহল ছিল ভারতের দিকে। এগুলির মোট আয়তন ছিল 7110 একর।
বাংলাদেশের 51টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের 47 টি ও জলপাইগুড়ি জেলায় 4 টি ছিটমহল অবস্থিত ছিল।
2005 সালের আগস্ট মাসে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
দহলা খাগড়াবাড়ি (Dahala Khagrabari) ছিটমহল:
দহলা খাগড়াবাড়ি
হলো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশ -ভারত সীমান্তে অবস্থিত একটি ভারতীয় ছিটমহল। এটি ভারতের একটি সিট মহল যা আবার বাংলাদেশের একটি ছিটমহলের মধ্যে অবস্থিত যে মূল ছিটমহলটি আবার ভারতের মধ্যে অবস্থিত। এটি বিশ্বের একমাত্র থার্ড অর্ডার ছিটমহল বা পাল্টা পাল্টা ছিটমহল। ১লা আগস্ট ২০১৫ তে এটি বাংলাদেশকে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
এটি ইন্দো-বাংলাদেশ ক্ষুদ্রতম ছিটমহলগুলির মধ্যে একটি।এটির আয়তন 7000 বর্গমিটার বা 1.7 একর।
দহলা খাগড়াবাড়ি
বাংলাদেশী গ্রাম 'উপনচৌকী ভজনী' দ্বারা সম্পূর্ণরূপে ঘেরা ছিল। এই 'উপনচৌকী ভজনী' ভারতীয় গ্রাম 'বালাপাড়া খাগড়াবাড়ির অন্তর্গত। আবার বালাপাড়া খাগড়াবাড়ি নিজেই বাংলাদেশের দেবীগঞ্জ, রংপুর বিভাগে অবস্থিত। এভাবে দহলা খাগড়াবাড়ি
ছিল একটি ছিটমহলের ছিটমহল। বাস্তবে, এটি চাষের জন্য ব্যবহৃত জমির একটি অংশ ছিল এবং প্রকৃতপক্ষে বাসযোগ্য ছিল না।
এই ছিটমহলের মালিক ছিলেন একজন বাংলাদেশী কৃষক যিনি দহলা খাগড়াবাড়ির আশেপাশের ছিটমহলে থাকেন।
ছোট আকারের সত্ত্বেও, দহলা খাগড়াবাড়ি
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাওয়া ছিটমহলগুলির মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল না। সবচেয়ে ছোট ছিল পানিসালা (79 নং) 1,090 বর্গ মিটার (0.27 একর) একটি ভারতীয় ছিটমহল যা বাংলাদেশের রংপুরে অবস্থিত।
ভারত ও বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম ও বৃহত্তম ছিটমহলগুলো
বৃহত্তম বাংলাদেশি সিটমহল কোনটি?
দহগ্রাম (Dahagram) হল বৃহত্তম বাংলাদেশি ছোটমহল। আয়তন 15.690 বর্গ কিমি।
ক্ষুদ্রতম বাংলাদেশি ছিটমহল কোনটি?
উপান চৌকি বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম ছিটমহল। আয়তন 0.00287 বর্গ কিমি মাত্র।
ভারতের বৃহত্তম ছিটমহল কোনটি?
বালাপাড়া খাগড়াবাড়ি হলো ভারতের বৃহত্তম ছিটটমহল। আয়তন 25.952 বর্গ কিমি।
ক্ষুদ্রতম ভারতীয় ছিটমহল কোনটি?
নাটাতোকা হলো ক্ষুদ্রতম ভারতীয় সিটমহল।আয়তন 0.00105 বর্গ কিমি ।
মশালডাঙ্গা ছিটমহল কোথায় অবস্থিত ছিল?
উত্তর: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার মধ্যে অবস্থিত, মধ্য মাসালডাঙ্গা, পূর্ব মশালডাঙ্গা, ও দক্ষিণ মশালডাঙ্গা। 2015 সালে ছিটমহল বিনিময়ের পর ছিটমহলের আর কোনো অস্তিত্ব নেয়।
বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয় কত সালে? অথবা, ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় হয় কত সালে?
উত্তর: 2015 সালে ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় হয়।
ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশের আয়তন কত?
উত্তর: ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশের আয়তন হয় ১৪৭৬১০ বর্গকিমি।
তবে সরকারি হিসেবে এখনও ১৪৭৫৭০ বর্গ কিমিই গণনা করা হচ্ছে।
ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতের আয়তন কত?
উত্তর: ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতের আয়তন এর পরিবর্তন সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়নি। এখনো পূর্বের আয়তনে সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়। ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারত ৭১১০ একর বাংলাদেশি ছিটমহলে l লাভ করে, অন্যদিকে বাংলাদেশ বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল ১৭১৬০ একক লাভ করে।