মেঘ কাকে বলে | বিভিন্ন প্রকার মেঘ | বৈশিষ্ট্য | আকৃতি | কোন মেঘে কতটুকু বৃষ্টি

বিভিন্ন প্রকার মেঘের আকৃতি | বৈশিষ্ট্য | উচ্চতা | বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা | সিরাস | সিরোস্ট্যাটাস | সিরো কিউমুলাস অল্টো কিউমুলাস | অল্টো স্ট্রাটাস ..
জলীয় বাষ্পপূর্ণ হালকা বায়ুর ক্রমশঃ উপরে উঠলে অতিরিক্ত শীতলতার সংস্পর্শে সম্পৃক্ত হয়।এই সম্পৃক্ত বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্ক এর নিচে নেমে গেলে ঘনীভবনের ফলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল্পনা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা,কয়লার কনা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণার আকাশে ভেসে বেড়ায়। এদের আমরা মেঘ বলি।


বিভিন্ন প্রকার মেঘের গঠন ও বৈশিষ্ট্য
চিত্র: কিউমুলাস মেঘ


অবস্থান অনুযায়ী মেঘ কয় প্রকার ও কি কি

অবস্থান অনুযায়ী মেঘ তিন প্রকার:
🔸 উচু মেঘ।
🔸 মাঝারি মেঘ।
🔸 নীচু মেঘ।

💠 উচু মেঘ 💠

ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে 6057 মিটার থেকে 12350 মিটারের মধ্যে অবস্থিত মেঘকে উঁচু মেঘ বলে। বিভিন্ন প্রকার উঁচু মেঘগুলি হলো:

  • সিরাস
  • সিরো স্ট্যাটাস
  • সিরো কিউমুলাস


☁️ সিরাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এটি সর্বোচ্চ স্তরের মেঘ।
  • ঘোড়ার লেজ বা ঝাঁটা বা চামচের মতো দেখতে।
  • দিনের আলোয় সাদা পালকের মতো দেখতে কিন্তু সূর্যাস্তের আলোয় বর্ণচ্ছটা দেখা যায়।
  • আকাশে সিরাস মেঘ থাকলে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে। বৃষ্টিপাত হয় না।


☁️ সিরো স্ট্রাটাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • পাতলা ফিনফিনে সাদা পর্দা বা চাদরের মতো দেখতে1।
  • আকাশে রামধনু দেখা যায়।
  • এই মেঘের মধ্যে দিয়ে সূর্য ও চাঁদ কে উজ্জল মন্ডল এর মত দেখায়।
  • এই মেঘ ঝড়ের সংকেত বহন করে।
  • আকাশে সিরো স্ট্রাটাস মেঘ থাকলে আকাশ পরিষ্কার থাকে কিন্তু কখনো কখনো বৃষ্টি হয়।


☁️ সিরো কিউমুলাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এই মেঘ গোলাকার স্তুপের মত ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো আকাশে ভেসে বেড়ায়।
  • অতি সূক্ষ্ম তুষারকণা দিয়ে এই মেঘ গঠিত।
  • আকাশে মেঘ থাকলে ম্যাকারেল মাছের আঁশের মতো দেখতে হয়। এরূপ আকাশকে ম্যাকারেল আকাশ বলে।
  • আকাশে সিরোকিউমুলাস মেঘ থাকলে আবহাওয়া খুব মনোরম হয়।

💠 মাঝারি মেঘ 💠
ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে 2135 মিটার থেকে 6097 মিটার এর মধ্যবর্তী মেঘকে মাঝারি মেঘ বলে। দুই প্রকারের মাঝারি মেঘ দেখা যায় যথাক্রমে:

  • অল্টো কিউমুলাস
  • অল্টো স্ট্রাটাস

☁️ অল্টো কিউমুলাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য

  • এই মেঘ গোলাকার পশম গুচ্ছের মতো আকৃতিবিশিষ্ট।
  • এই মেঘের রং ধূসর।
  • এই মেঘের মাঝে মাঝে নীল আকাশ দেখা যায়।
  • এই মেঘের স্তুপ গুলি আকারে বড় এবং ঢিবির মতো দেখতে ।
  • আকাশে অল্টো কিউমুলাস মেঘ থাকলে আবহাওয়া পরিষ্কার থাকে।


☁️ অল্টোস্ট্রাটাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য

  • এই মেঘের রং ধূসর বা নীল।
  • চাদরের মতো এই মেঘ সমগ্র আকাশ জুড়ে ভেসে থাকে।
  • এই মেঘের মধ্যদিয়ে সূর্য রষ্ণী ক্ষীণভাবে আসে এবং সূর্যকে আবছা এবং অনুজ্জ্বল দেখায়।
  • এই মেঘ আকাশে থাকলে বৃষ্টিপাত হয় এবং অনেকক্ষণ ধরে চলে।


💠 নিচু মেঘ 💠
ভূপৃষ্ঠ থেকে 2135 মিটার উচ্চতার মধ্যে যে মেঘ থাকে তাকে নীচু মেঘ বলে। সাধারণত পাঁচ ধরনের নীচু মেঘ দেখা যায় যথাক্রমে:

  • স্ট্রাটোকিউমুলাস
  • স্ট্যাটাস
  • নিম্বাস বা বাদল মেঘ
  • নিম্বোস্ট্যাটাস
  • কিউমুলাস


☁️ স্ট্রাটোকিউমুলাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এই মেঘের রং ধূসর থেকে কালো পর্যন্ত হয়।
  • নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের শীতকালে এই মেঘ অনেক সময় সারা আকাশ ঢেকে ফেলে।
  • মধ্য আকাশের অল্টকিউমুলাস মেঘ আরো ভারী ঘন হয়ে নিচে নেমে এসে এই মেঘের সৃষ্টি হয়।
  • আকাশে মেঘ থাকলে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।


☁️ স্ট্যাটাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এই মেঘ সাদা ও দুসর বর্ণের হয়।
  • কুয়াশার চাদরের মতো এই মেঘলা আকাশ ঢেকে রাখে।
  • এই মেঘের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ে ওঠা বিমান চালানো অসুবিধাজনক।
  • আকাশে মেঘ জমলে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়।


☁️ নিম্বাস বা বাদল মেঘ এর আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এই মেঘ এর রং গারো ধূসর বা কালো।
  • ভূপৃষ্ঠের খুব কাছেই এই মেঘে আকাশ ঢেকে থাকে।
  • আকাশে মেঘ জমলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।


☁️ নিম্বোস্ট্যাটাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • বর্ষাকালে এই নীল আকাশের এক দিকে জুড়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো স্তরে স্তরে সজ্জিত অবস্থায় থাকে।
  • রংদারি ধূসর বা কালো।
  • এই মেঘ এত ঘন যে সূর্যকে দেখা যায় না।
  • এই মেঘে বিদ্যুৎ চমকায় না বজ্রপাত হয় না।
  • আকাশে মেঘ জমলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হয়।


☁️ কিউমুলাস মেঘের আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এই মেঘ দেখতে গম্বুজের মত।
  • এই মেঘের উপরের অংশটা ফুলকপির মতো আকৃতির হয়।
  • এই মেঘের উপর দিয়ে উজ্জ্বল সূর্যালোক দেখা যায়।
  • এই মেঘ বিচ্ছিন্নভাবে আকাশে অবস্থান করে।
  • আকাশে মেঘ জমলে পরিষ্কার আবহাওয়া থাকে।


এছাড়াও আরও এক প্রকারের মেঘ দেখা যায় যা যেকোনো উচ্চতায় থাকতে পারে। প্রধানত ভূপৃষ্ঠ থেকে ন হাজার মিটার উচ্চতার মধ্যেই এই মেঘের অবস্থান। এই মেয়েকে বলা হয় কিউমুলোনিম্বাস মেঘ।

☁️ কিউমুলোনিম্বাস মেঘ এর আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য


  • এই মেঘের অবস্থান ভূপৃষ্ঠ 9000 মিটার পর্যন্ত হয়।
  • এই মেঘের উচ্চতা বিশাল পর্বতের মত।
  • এই মেঘের তলদেশ কালো হয়।
  • কালবৈশাখীর সময় এই মেঘ উত্তর পশ্চিম আকাশে দেখা যায়।
  • প্রচন্ড ব্রজর বিদ্যুৎ দেখা যায় বলে এই মেঘের আরেক নাম বজ্রমেঘ।
  • আকাশে মেঘ জমলে বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল পরিচলন বৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে শিলাবৃষ্টিও হয়।