সোশ্যাল অডিট বা সামাজিক নিরীক্ষা হল সেই প্রসেস যার মাধ্যমে কোন সরকারি প্রকল্পের কাজের মূল্যায়ন বা অডিট করা হয়।
বর্তমানে সামাজিক নিরীক্ষা কাজ করে গ্রামীন সম্পদ কর্মী রা যাদের সহজ ভাষায় ভিআরপি বলে। গ্রামীন সম্পদ কর্মীরা শুরুতে বছরে 15 দিন সামাজিক নিরীক্ষা কাজটি করতো।পরবর্তীতে খাদ্য সুরক্ষার সার্ভে এর জন্য অতিরিক্ত পাঁচদিন যুক্ত হয়। কিন্তু খাদ্য সুরক্ষার 5 দিনের কাজ বাদ যাওয়ার পর যখন কুড়ি থেকে কাজ আবার সেই পনেরোতে এসে ঠেকেছে তেমন সময় কি গ্রামীন সম্পদ কর্মীরা বিশ্বাস করতে পারবে 150 দিনের কথা ?

কোথায় উল্লেখ আছে সামাজিক নিরীক্ষা আর 150 দিনের কথা?
সামাজিক নিরীক্ষা ও ভি আর পি দের নিয়োগের কথাটা সরকারের মাথায় তখনই আসে যখন তারা MGNREGA এর কাজ চালু করে।সরকারি ওয়েবসাইটে গ্রামীন সম্পদ কর্মী দের কাজের ট্রেনিং মানুয়াল পিডিএফ ফাইল আছে অনেক আগে থেকে। সময়টা জানলে আপনি অবাক হবেন ফাইল টা আপলোড করা হয়েছিল 2017 সালের একুশে এপ্রিল।আজ প্রায় তিন বছর হয়ে গেল কিন্তু সামাজিক নিরীক্ষা কাজের সেই শেষের শূন্যতা দেখা যায়নি। রয়েই গেছে সেই 15 দিনের কাজ।
কি বলা আছে এই ট্রেনিং ম্যানুয়াল এ
ট্রেনিং ম্যানুয়াল এর 145 তম পৃষ্ঠায় সামাজিক নিরীক্ষা কে আরো ইমপ্রুভ করার জন্য কি কি করা যায় তার একটা সাজেশন দেওয়া আছে। যে সময় ট্রেনিং ম্যানুয়াল টি পাবলিশ করা হয়েছিল সেই সময় কেন্দ্র সরকারের যে রাজনৈতিক দল ছিল বর্তমানেও সেই একই দল আছে তাই আমরা এই সাজেশন বাস্তবায়িত হওয়ার আশা রাখতে পারি। সেখানে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে:
ভবিষ্যতে সামাজিক নিরীক্ষণের উন্নতির জন্য পরামর্শ
- 1. ভবিষ্যতে ভিআরপিকে যাচাইকরণের পদ্ধতিগুলিতে আরও জোর দেওয়া।
- 2. ভিআরপিগুলির মেয়াদ তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে 3 বছর হওয়া উচিত ।
- 3. এক বছরে কমপক্ষে ১৫০ দিনের কাজ সরবরাহ করার লক্ষ্যে নিযুক্ত থাকা এবং টিএ এবং ডিএ দেওয়া।
- 4. সাথে তাদের সম্মাননা বাড়ানোর জন্যও সামাজিক নিরীক্ষায় নিয়োজিত না থাকাকালীন শ্রমিকদের সচেতনতা এবং সংহতিকরণের জন্য কার্যকরভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন।
- 5. খবরের কাগজগুলিতে প্রকাশিত হবে এবং পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হতে হবে জেলা ও ব্লক পর্যায়ে অফিস ব্যয়ের পরিমাণ
- 6. 7 দিনের মধ্যে জেলা পর্যায়ে ডেটা এন্ট্রি নিশ্চিত করতে হবে।
- 7. ভিআরপিগুলিকে 7 দিনের তাদের সাম্মানিক প্রদান করতে হবে।
তাহলে 150 দিন সামাজিক নিরীক্ষার কাজ হয় না কেন
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন কিন্তু অনুমান করা খুবই সহজ।সামাজিক নিরীক্ষা কাজ খুব শক্তভাবে হলে সরকারকে একদিকে যেমন সাম্মানিক এর জন্য বেশি অর্থ খরচ করতে হবে তেমনি অনেক দুর্নীতি উঠে আসবে বেশি বেশি করে।এ বিষয়ে আপনারা সকলেই জানেন দুর্নীতি জারি ধরা পড়ুক না কেন সমস্যা কিন্তু শাসক দল এর হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই কোন রাজ্য সরকারি উপরের পরামর্শগুলি মানতে নারাজ।
এগুলি বাস্তবায়ন না হওয়ার পিছনে প্রধান কারা
এগুলি বাস্তবায়ন না হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হিসেবে আমি মিডিয়াকে দেব।যেখানে কোনো নেতা মন্ত্রীর উপর হারিয়ে গেলে তা সংবাদমাধ্যমে দেখায় সেখানে এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো টিভি স্ক্রীন তো দূরের কথা পেপারের একটা ছোট্ট কোণে ও তারা লিখতে পারেনা। বর্তমানে সংবাদ মাধ্যমগুলির এইরূপ আচরণ তাদের নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করছে।
150 দিন সামাজিক নিরীক্ষা হলে কি কি আমূল পরিবর্তন আসবে
মেঘালয়ের মত রাজ্যতে কিন্তু বর্তমানে মাসে কুড়ি দিন কাজ তারা পায়। সেক্ষেত্রে তাদের প্রতি মাসে বেতন তারা পায়।অর্থাৎ মেঘালয়ের সরকার পরামর্শগুলো সম্পূর্ণরূপে মেনে নিয়েছে তাছাড়া আলাদা সোশ্যাল অডিট আইন তৈরি করে আরো বেশি উন্নত করেছে তাদের সামাজিক নিরীক্ষা কে। সেক্ষেত্রে যদি পশ্চিমবঙ্গে এই পরামর্শ এর বেশি সে কাজ হয় তাহলে নিচের ঘটনাগুলি ঘটবে:
- প্রথমত গ্রামীন সম্পদ কর্মী দের হাত অনেকটা শক্ত হবে।
- গ্রামীন সম্পদ কর্মীরা আরো নির্ভুলভাবে তাদের কাজটা করতে পারবে।
- সাত দিনের মধ্যে ডাটা এন্ট্রি করলে অনেক দুর্নীতি কমবে।বছরের দীর্ঘদিন কাজ অর্থাৎ এটা প্রায় সারাবছরই কন্টিনিউ থাকছে তাই এক্ষেত্রে গ্রামীন সম্পদ কর্মী দের অনেক গুরুত্ব বাড়বে সাথে আর্থিক দিক দিয়েও তাদের জীবন উন্নত হবে।
রাজ্য কমিটির ভূমিকা কি হওয়া উচিত
এ বিষয়ে রাজ্য কমিটির কিছু করার নেই।কারণ এই পরামর্শটা আজ থেকে তিন বছর আগে দেওয়া হয়েছিল এবং সেটা সরকার এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি তাই রাজ্য কমিটির কথা শুনে সরকার এটা বাস্তবায়ন করবে বলে আমার মনে হয় না। আপনাদের কি মতামত অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
150 দিন কাজ হলে সেই অনারিয়াম এর টাকা কে প্রদান করবে
যদি 150 দিন কাজ করা হয় তাহলে সেই অর্থ প্রদান করবে কেন্দ্র সরকার। আমরা জানি কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের একটা অংশ সামাজিক নিরীক্ষার কাজে ব্যয় হয়।100 দিনের কাজের মোট অর্থব্যয়ের 5% সামাজিক নিরীক্ষা কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।আরিফা শতাংশ টাকা অনেক বড় অঙ্কের একটি টাকা যা দিয়ে 150 দিন কাজ অনায়াসেই করানো সম্ভব।
শেষ কথা
বন্ধুরা আশা হারাবেন না ।সব সময় নিজের কাজটা কি আরো ভালোভাবে করুন। রাজ্য সরকার ও একটা নতুন ধরনের উদ্যোগ নিতে চলেছে। যেখানে রাজ্য সরকার কন্যাশ্রী সহ বিভিন্ন রকমের প্রকল্পের কাজ আলাদা দপ্তরে করাবে। অনেকগুলো সেন্টার তৈরি হবে। এ বিষয়ে রুমার শোনা যাচ্ছে যে এই কাজটি গ্রামীন সম্পদ কর্মী দের দিয়ে করানো হতে পারে। সময়ের অপেক্ষা সকল প্রশ্নের উত্তর আপনারা পাবেন। এ বিষয়ে কোনো মতামত দিতে চাইনা। আপনারা ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।নিজের গ্রামীন সম্পদ কর্মী ভাই বোনেদের সাথে এই নিউজটি শেয়ার করুন।